
সেপ্টেম্বর মাসের ঝলমলে রোদে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের পশ্চিম প্রান্তে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখলাম একদিন । কিছু বৈশিষ্ট আছে পশ্চিম দিকের লাল মাটির দেশে যা দেখার চেও বেশি অনুভব করা যায় শুধু । ভাগ্যক্রমে ঠান্ডা পড়ার আগেই ঐতিহাসিক সব যুদ্ধের সেই পীঠস্থানে যাওয়া হলো । গাছ পশু প্রাণী সব আলাদা ... অবাক রকমের বৈপরীত্ব জাস্ট কয়েকশো মাইল এদিক ওদিকের মধ্যে ... শুকনো লাল মাটির দেশে সব কিছুই অন্য রকম লাগে । পথের ধারের বিশাল বিশাল লাল পাথর থেকে শুরু করে গাড়ি থেকে নেমে গ্যাস ভরার সময় যত দূরে চোখ যায় ততদূর রোমাঞ্চকর উঁচুনিচু ল্যান্ডস্ক্যাপের দিকে তাকিয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে কয়েকশো বছর আগের সিউক্স, আপাচে ও নাভাজো উপজাতিদের জীবিকা । বহু জায়গাতে তাদের দোকান ও ষ্টল ও মিউজিয়াম এ গিয়ে কথা বলে জানা যায় মানুষ আজ যেমন তখনও তেমনি ছিল ... পার্থক্য হচ্ছে শুধু আজ রয়েছে ইউনাইটেড নেশনস আর জি৮ সামিটের শৃঙ্খল আর তখন ছিল যার যত বড় আগ্নেয়াস্ত্র । যুগ যুগ ধরে যারা দাপিয়ে বিচরণ করেছিল উত্তর থেকে দক্ষিণ, যারা ঘোড়ার পিঠে চড়ে অভ্রান্ত নিশানায় করতো বাইসন শিকার, যাদের বীরত্বের প্রতীক নিউ মেক্সিকো থেকে শুরু করে অ্যারিজোনা হয়ে উটাহ থেকে ডাকোটা অবধি পাওয়া যায়, যাদের ইনস্টাগ্রাম পেজ এ আজও ফুটে ওঠে গভীর যন্ত্রণার আর্তনাদ, যাদের আত্মসমর্পনের হাড় হিম করে দেওয়া কাহিনী বরাবরের জন্য রাঙিয়ে দিয়েছে মার্কিন ইতিহাস - সেই তাদের পদধ্বনি অসম লড়াইয়ে নীরব থেকে নিস্তব্ধ হয়ে নিষ্প্রাণ অশ্রূ রয়ে গেলো বিশ্বাসঘাতকতার দৃষ্টান্ত ট্রেইল অফ টিয়ারস নামে বিখ্যাত হয়ে ।

লেক পাওয়েল নামে পরিচিত সুগম ও ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা এই বিস্ময় উপলব্ধি করতে হলে অবগত হতে হয় গত সহস্র বছরের ইতিহাসের সাথে - বিশেষ করে ১৯৫৬ - ৬৬ সময়টি গ্লেন ক্যানিয়ন বাঁধের আবির্ভাব এবং আপার বেসিনে জল সঞ্চয়ের মনুষ্যসৃষ্ট এই অভিনব লেকের গল্প । গ্রান্ড ক্যানিয়নের প্রকাণ্ডতা ও রোমাঞ্চে ভরা রোদ আর ছায়ার রেশ কাটার আগেই ছোট্ট শহর পেজ থেকে একটু দূরে নাভাজো স্যান্ডস্টোনের রঙিন প্রদেশে গাঢ় নীল আহ্বানে ভেসে পড়লাম। মোটর চালিত নৌকার ছাদের থেকে প্রকৃতির নিঃস্বার্থ আবেগের প্রলেপে মিশে গিয়ে অনুভব করা যায় তীব্র এক জীবিত উপত্যকার গভীর কাহানি - যেখানে জলের থেকে শুরু করে দুদিকের পাথররাও জানাতে চায় তাদের বছরের পর বছরের অবক্ষয়ের ও সহিষ্ণুতার অমর শিলালিপি । গ্লেন ক্যানিয়নের সান্নিধ্যে আর অভিভাবত্বে প্রতিনিয়ত নিজেকে আবিষ্কার করে চলেছে এন্টিলোপ ক্যানিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান ৫০০ ফুট গভীর মেঘের রঙে তাল মিলিয়ে নীল উন্মাদনা । স্যান্ডস্টোনের ঝলমলে সময়ের রঙের বহির্প্রকাশ দেখে ভুলে যাই কোন দিকে তাকাবো আর কিসের ছবি তুলবো - প্রাচীনত্বের সুরে বয়ে চলার সাথে সাথে অবিরাম তীক্ষ্ন চমক । সময়ের জালে বোনা গভীর পাওয়া না পাওয়ার স্রোতে ভেসে যেতে যেতে পাথরের ক্যানভাসে প্রকৃতির অন্তর্লিখনের রহস্যোদ্ধার করার আকর্ষণ যে মোহময় অনুভূতির সৃষ্টি করে সেই স্মরণীয় মুহূর্ত গুলোই সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি ।

1 thought on “সময়ের আঁকে বাঁকে”