
হেমন্তের হাওয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেই বোঝা যায় । কোথাও কিছু একটা কোনো ভাবে ইশারা করতে থাকে আমি এসে গেছি বলে । অন্য কোনো ঋতুর সময় এটা হয়না, বেশি না ভেবে নিঃসন্দেহে লালমোহন বাবুর ভাষায় বলে চলে হাইলি সাস্পিসাস ! যেখানে সীমানার কোনো বাধা ধরা নেই, স্বাধীন চিন্তার এবং ঠিক ভুল বিচার করে রাস্তা নির্বাচন করার জটিলতা নেই – সরল ভাবে উত্তরের শীতলতম প্রদেশ থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্রমশ দক্ষিণে নেমে আসার এই রূপ নজর করার মতন ।

প্রযুক্তির সুবিধায় এখন প্রকৃতির পরের পদক্ষেপ হিটম্যাপের্ মাধ্যমে ইন্টারনেটে আগাম জেনে নেওয়া যায় । সেই মতো রওনা হয়ে পড়লাম রঙের বাহারের মাঝখানে । শুরুতে কিছু গাছের উজ্জ্বল লাল অথবা গাঢ় কমলা রং নজর কারে, আস্তে আস্তে তা আগুন হয়ে ছড়িয়ে পড়লো যত দূরে চোখ যায় ততোদূরে । সূর্যের আলো পাতার ফাক দিয়ে রং পাল্টে সব কিছুর রূপ বদলে দিচ্ছে মাটির কাছাকাছি ।
অল্প বাতাসের ধাক্কাতেই রঙের বৃষ্টি শুরু হয়ে যাচ্ছে গাছের ওপর থেকে, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় তাই মোচর মোচর আওয়াজের কৌতূহল উত্তর রাখে নির্দয় তুষারের আগমনের মাঝে প্রাণোচ্ছলতার । ক্যামেরার লেন্সের দৃষ্টিকোণ খুঁজতে পাগল মানুষের ভিড় চতুর্দিকে ছড়িয়ে শত শত মাইল ভ্রমণ করে কেউ পৌঁছে যাচ্ছে উঁচু পাহাড় চূড়োতে, কেউ বা গভীর জঙ্গলের ভেতর লুকোনো কোনো নির্মল লেকের প্রতিফলনে, কেউ বা অভিভূত হয়ে প্রকৃতির রঙে মিশে যেতে চেয়ে ক্যাম্পিং করছে জঙ্গলের মাঝখানে, প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের মাঝে সকলের প্রাণের সূত্র ধরে এরম উল্লাস ঐন্দ্রজালের চেয়ে কম নয় ।

জানলার কাঁচ তুলে রাখবো না নামিয়ে রাখবো, হাওয়াতে ঠান্ডা লেগে যাবে নাকি আরেকটু প্রাণ জুড়িয়ে নিঃশাস নেবো, লেকের ধারে গাছতলায় বসে সূর্যোদয় বেশি ভালো লাগলো নাকি স্থির জঙ্গলের মাঝে হঠাৎ চমকে দেওয়া উড থ্রাসের গান করে ওঠা বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকলো, মেঘের ফাঁক দিয়ে রোদের স্পর্শে পাতার রং বেশি হৃদয়স্পর্শী নাকি মেঘলা আকাশে পাহাড়ের ওপর থেকে অল্প বৃষ্টিতে ভেজা ঘন জঙ্গলের উচ্ছসিত গন্ধের রহস্য বেশি রোমাঞ্চকর, এই তর্ক বিতর্কের শেষ ভ্রমণকালীন হয়নি, না হওয়াই রয়ে যাক !

খুবই সুন্দর প্রতিবেদন । স্নিগ্ধ ভাষায় অপরূপ বর্ণনা ।